Friday 5 April 2013

কিছু নির্দল কান্না...

ফুচু রাস্তায় হাঁটত। ফাঁকা রাস্তায় একা। ভিড় রাস্তাকে বড্ড ভয় পেত।

ওর ভয় আমাদের আনন্দ দিত খুব। ওর সাথে থাকলেই তাই ভিড়

 রাস্তার দিকে পা বাড়াতাম বন্ধুরা। ও গুটিয়ে নিত নিজেকে। পালাবার

 পথ খুঁজত। পালাতে পারতো নাহ। ওর মুখের অসহায় ভাব আমাদের

 সাদা দাঁতের ঝলসানিতে ঢাকা পড়ে যেত। কলেজে গিয়ে ফুচু বড়

 হয়েছিল। তখন আর ভয় পেত নাহ। ভিড়ের মাঝেই থাকতো

 সবসময়। বদলে গিয়েছিল ভীষণ। একা বোকা আমাদের বন্ধুটাকে

 আর খুঁজে পাওয়া যেত নাহ যেন। ভীষণ ব্যস্ত। অনেক মূল্যবোধ

 জমিয়েছিল মনের মধ্যে। দেখা হলেই আওড়াত। ভাল লাগত না।

 বুঝতাম না বলেই হয়তো। বোঝার চেষ্টাও করিনি কোনদিন।

 একদিন বাসে দেখা হতে দুজনের টিকিট কেটেছিল নিজে। অনেক

 পুরনো কথা হয়েছিল সেদিন । সেদিনই বুঝেছিলাম ও হারায়নি। শুধু

 বড় হয়ে গেছে একটু। বাসের টিকিটটার দিকে তাকিয়ে হেসে

 বলেছিল ''এর নম্বরটা দেখেছিস??? ৫৮৬।

তোরটার নম্বর ৩০২।
আমরা শুধু এই সংখ্যা হয়েই বেঁচে আছি এখন। যতক্ষণ এই বাসে

 আছিস ওই সংখ্যাটাই তোর পরিচয়। ওটা না থাকলে তোকে লাথ

 মেরে ফেলে দেবে বাস থেকে। আমি দেখিস শুধু এই সংখ্যার মত

 বাঁচব নাহ। নিজের নামে বাঁচব। ''

চলে গিয়েছিল সেদিন। বলেছিল আবার দেখা হবে। দেখা হয়নি আর।

 শুনেছি ও মারা গেছে। কোনও এক মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের

 কথা, দেশের কথা বলতে গিয়ে মারা গেছে। কেউ বলছে খুনি

 পুলিস,কেউ বলছে নিছক দুর্ঘটনা। সে যাই হোক। সে মারা গেছে।

 ওর মৃত্যু গোটা রাজ্য তোলপাড় করেছে। ওর নামের সামনে দলীয়

 ছাপ বসে ওকে সম্মান দিয়েছে। শুধু দুঃখের কথা এই যে ফুচুর জন্য

 কেউ কাদেনি। কেঁদেছে যার জন্য সে ফুচু নয় । ফুচুর দলীয় প্রতীক।

 ফুচুর কথা মনে পড়লেই তাই প্রশ্ন জাগে, ফুচু কি আমাদের মতই

 বাসের টিকিট এর নম্বর হতে পারতো নাহ?? তাহলে ওর জন্য কেউ

 অন্তত কাঁদত।