Friday 23 August 2013

একটি আবছা গল্প...

                                             
 
                                               ১
'সম্ভব নয়' বলে চলে যাচ্ছে যে মেয়েটা সামনের দিকে, আবছা হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে- তাকে সূর্য চিনত। অনেকদিন আগে। মেয়েটা ফুচকা খেতে ভালবাসত অথবা অন্য যেকোনো খাবার।আর ভালবাসত বোকার মত হাসতে। বহুদিন আগের চেনা বিকেলে অনেক ঘুড়ি ঘেরা আকাশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যখন সূর্য বোকার মত মুখখানা আরও বেশি বোকার মত করে প্যাঁচ  দেখছিল তখন তাকে  চাকরির উপযোগিতা বোঝাচ্ছিল জিজ্ঞাসা । কোনও একটা অপছন্দের প্রশ্নে  হ্যাঁ বলাতে তীব্র এবং দীর্ঘ এক বকুনিতে একটানে আকাশ থেকে মাটিতে নামে সে ।  পছন্দের ঘুড়িটা তখন ভোঁকাট্টা হয়ে আমগাছের দিকে নামছে দ্রুতবেগে। সেদিনও জিজ্ঞাসাকে আবছা হতে দেখেছিল সূর্য ।
                                                    ২
ছোট শহরের রাতগুলো সবসময় খুব সুন্দর। কিছু ছোট বড় আলো,সাদা কালো রাস্তা আর বেশ কিছু ব্যস্ত মানুষজন নিয়ে দিব্যি বেঁচে থাকে শহর। যখনি শহরকে  দেখে সূর্য তখনি ওর মনে হয় ওর একটা শান্ত জীবন দরকার। জলের মত। যাতে মাঝে মধ্যে হালকা আলোড়ন হবে কিন্তু বড় ঢেউ থাকবে না কখনো। তাই ওর জিজ্ঞাসাকে  দরকার। জিজ্ঞাসাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব চেষ্টা করে সে। হালকা আলোয় ঘেরা শহর আর শান্ত রাস্তাগুলোর জন্য একসময় ভাবত জিজ্ঞাসাও।সূর্য জানে।এখন ভাবে না বোধহয় আর। রাস্তা ভেজানো আলোতে আজকাল একলা সূর্য ভাবতে ভাবতে ফেরে জিজ্ঞাসা ঠিক কি চেয়েছিল? শান্ত আলো, পথঘাট? নাকি দৌড়ে চলা মানুষ আর চোখ ধাঁধানো আলো? শান্ত আলোটা জিজ্ঞাসার মুখ থেকে সরে গেছে বহুকাল। তবু এখনো রাস্তায় শান্ত আলো খুঁজে পেলে এখনো খানিক দাঁড়িয়ে সেই আলোয় ভেজে সূর্য। মনে পড়ে ফাঁকা রাস্তা, হালকা আলো আর খুব বড় বড় দুটো চোখ। ঠিক সেসময় বোধহয় নিজেকেও আবছা হতে দেখে সূর্য।
                                                   ৩
বৃষ্টি পড়ছে খুব। বাড়ির ভিতর বসে সূর্য বৃষ্টিকে উৎসাহ দিচ্ছিল এই শহরকে ভেজানোর। পাশের বাড়ির ছাদে অনামিকাদি ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টি দেখছে বোধহয়। রাস্তার জমা জলে ফুটবল খেলা যেত ভাল। কতদিন খেলা হয় নাহ। ঠিক মোড়ের থেকে ডানদিকে দাঁড়িয়ে রজতের বোন এনা ওর প্রেমিক রাঘবের সাথে গল্প করে রোজ। এনা ভাল মেয়ে। গলির মোড়ের দিকে দাদাকে আস্তে দেখলেই পালাবে। রাঘবও হাওয়া হতে জানে চট করে। এসবই বড্ড চেনা। হয়েই থাকে। বোধহয় প্রতি পাড়াতেই। ওদের ঠিক পাশেই রঘুদার চায়ের দোকান। রঘুদা নেই অনেকদিন।  তবু দোকানের নামে ওর নাম বেঁচে আছে। চলে যাওয়া মুহূর্তগুলোকে আলাদা করে কোনও নাম দেওয়া গেলে ভাল হত বোধহয়। রঘুদা নেই।  মুহূর্তগুলোও। এই বৃষ্টির রাস্তায় আর কেউ ধরবে না সূর্যর হাত। একটু ভিজলেও রাগ না করে শুধু বড় বড় চোখ তুলে আর কেউ বলবে না 'এটা কি হচ্ছে?' সূর্য আছে। ছাতাটাও। শুধু কিছু সময় সবসময় বদলে যায়। সবকিছু আবছা হয়ে গেছে। আবছা হয়ে যায়। হয়তো আবছা হতেই আসে।
                                                     ৪
রাস্তাগুলো আছে। আলোগুলো আছে। 
আছে আস্ত শহরটাই । তবু শহরের কোনওখানে একটা বিশাল ফাঁক। এটাকেই কি শূন্যতা বলে? একলা থাকার ফল? জানে না সূর্য। এই শহরটা বাঁচে। আলোগুলোও। শুধু সূর্যের বাঁচাটা আবছা হয়ে গেছে। ওই বড় চোখদুটো আর বোকা বোকা হাসি মাখা মুখটার মতই। সবটাই কি চলে গেছে ওকে ছেড়ে? চলে যায়? আবছা হয় আস্তে আস্তে। কিন্তু চলে যায় না। ফিরে আসে প্রতিবার। একই রাতে। একই পথে।
                                     শুধু কিছু একলা মানুষ বেঁচে থাকে ''সম্ভব নয়'' শোনার জন্য সারাজীবন। তারপর? তারপর তারা আবছা হয়ে যায়...