Wednesday 23 September 2015

শহর ও দুজন 

আবির-

ইনবক্স ভরে গেছে মেসেজে। এখনো seen হয়নি একটাও। তবু লিখেই চলেছে আবির। একটা অদ্ভুত পাগলামি কাজ করছে ওর ভিতরে। তাই থামতে চেয়েও পারছে না থামতে। ও জানে অপালা এগুলো দেখবে না। দেখছে না ।বলা ভালো দেখতে চাইছে না। 
তবু থামা যাচ্ছে না।
অনেকগুলো কথা বলার আছে। অনেকগুলো কথা বলে ফেলা দরকার। যেগুলো পরে বললে আর কোন মানে দাঁড়াবে না। তাই এখনই। কালকে আর এই গোটা শহরটায় কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না অপালাকে। শুধু অনেকগুলো ডাকনামের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ওদের বড় বাড়ি ,পাড়ার মোড় আর কলেজ স্ট্রীটের কিছু রাস্তারা। দিশাহারা এই শহরটা হঠাৎ করেই হয়ে যাবে সাদাকালো । আর ন্যাকাবোকা প্রেমের জন্য খিস্তি আর খিল্লি বরাদ্দ থাকবে মাঠের ধারে। 
এইসব কথাগুলো  বুঝতে হত অপালাকে। এইসব অনেক কথা যেগুলো আবির বোঝাতে চেয়েছিল, চাইছে। বুঝতে হত কিভাবে একটা মানুষের জীবন সাদাকালো হয়ে যায় অন্য মানুষটাকে ছাড়া। কিভাবে ডাকনামগুলো হয়ে যায় স্মৃতি আর কিভাবে প্রতিটা ব্যর্থ প্রেম হয়ে যায় ন্যাকা ইমোশন। এত কিছু বোঝার ছিল অপালার। এখন শুধু কথাগুলো থেকে যাবে। দামী কথাগুলো, নিজের জীবনের সবচেয়ে সত্যি কথাগুলো পরে থাকবে অপালার ইনবক্সে। seen না হয়ে, অবহেলায়। আর হলেও হয়তো উত্তর আসবে না কোনদিন। 

অপালা-

 এত বড় বাড়িটায় কোথাও আর কালকের পর ঘুরে বেড়ানো যাবে নাহ। নিজের ছোটবেলা, নিজেকে নিয়ে হারিয়ে যেতে হবে অন্য কোন শহরে। এই গোটা বাড়িটায় যেখানে মা চলে যাওয়ার পর সর্বত্র মা জড়িয়ে আছে, সেই মা কে ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে এখানেই। এটাই কেউ বুঝতে পারছে না।দিদি ,বাবা সকলের কাছেই এখন ও শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব। বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে সবদিক থেকে শান্তি। ও নিজেও বিয়ে করে নিতেই চায়। সিকিউরিটি দরকার এই ভাঙ্গা জীবনের। মা চলে যাওয়ার পর গোটা পৃথিবীটাই কেমন সাদাকালো। যেন মানুষটা রঙ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ওর জীবনটা রঙিন করার জন্য। সব নিয়ে পালিয়ে গেছে বুড়ি। চারপাশের চেনা মানুষগুলোকেই। এখন লোকগুলো অনেক বেশি দায়িত্ববান। সহজ ব্যাপারটাই হারিয়ে গেছে জীবন থেকে। এখন দিদি অনেক বেশি মা এর মতো হতে চায়।পারে না। চেষ্টা করে তবু।আর বাবা? যে  মানুষটা আগে অনেক সহজ ছিল এখন বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রবলভাবে আগ্রহী। কোথাও একটা দাঁড়িয়ে নিজেকে বড় ছিন্নমূল মনে হয়। এই এত বড় বাড়িটা, পুরনো জীবন, খুব সহজ সময়টা হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও। পুরনো অপালাই কি হারিয়ে যাচ্ছে না। এই ব্যাপারটা আবিরও বোঝে না। তবুও মনে হয় ওর অন্তত বোঝা উচিত ছিল। এত হারানোর মাঝে তাই আবিরও হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও। আর কদিন পর সিকিউরিটি দেওয়া ছেলের সাথে বিয়ে হলে পুরোপুরিই হয়তো হারিয়ে যাবে আবির। কিছু একটা কি থেকে যাবে? এই সময়গুলো, আবির ,ওর লেখা ইনবক্সের মেসেজ -কিছু কি থাকবে? জানে না অপালা।জানতে চায় ও না। ও শুধু শান্তি চায় এখন। নীরব, নিভৃত শান্তি। 

শেষ কিছু কথা- 

গোটা শহর পরে থাকে। পড়ে থাকে আবির,অপালা। তাদের তৈরি করা ডাকনামগুলো। ঝালমুড়ির ঠোঙ্গায় অথবা শেষ বিকেলের একসাথে হাঁটায় অনেকগুলো কথা  থেকে যায়। যেগুলো আর ওদের থেকে শুনতে পাবে না শহর। তবু ওরা কি থাকবে না কোথাও? এই শহরের বুকের থেকে হারিয়ে যাবে? তা নয়। ওরা থাকবে। ওরা থেকেই যায়।  হয়তো ওদের নাম এক হবে না। হয়তো ওদের গল্পে থাকবে না ভাংচুর। একটা মসৃণ রাস্তা ধরে ওরা আসবে গল্পের শেষে। তবু ওরা মরবে না। মরে নাহ। অন্তত শহর মরতে দেয় না ওদের...
                              

No comments:

Post a Comment